আসক্তি দূরীকরণ সিরিজ ৬ (এনিমে,মুভি,টিভি সিরিজের আসক্তি দূরীকরণ)


প্রথমেই বলে নেই, এনিমে,মুভি & টিভি সিরিজ দেখা থেকে কেন আমাদের বিরত থাকতে হবে।

এসব দেখা বন্ধ করার অন্যতম কারণ হলোঃ

১. একজন মুসলিম হিসেবে এই বিনোদন গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলামের সীমার বাইরে চলে যায়। তাছাড়া

২. এক-একটা এনিমে & টিভি সিরিজ গুলো হয় কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েকশো ঘন্টা। এভাবে সামান্য বিনোদনের জন্য নিজের জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো নষ্ট করা কখনোই একজন প্রোডাক্টিব মানুষের কাজ হতে পারে না।আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো 

৩. এগুলো কখনোই আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। বরং দিন দিন আপনাকে ডোপামিন রেসিস্টেন্স করে তুলবে। এসম্পর্কে সামনে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।

বর্তমান সময়ের অন্যতম ভয়াবহ একটি আসক্তি হচ্ছে মুভি & টিভি সিরিজের আসক্তি। টিভি শো দেখা প্রথমে আনন্দদায়ক এবং তারপরে মানসিক ওভারলোডের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করে ফেলে।

বর্তমানে বিভিন্ন সিনেমাহলের পাশাপাশি বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া নানা ওয়েব সিরিজের প্রতি আকর্ষণ এখন আট থেকে আশি, যা প্রায় সকলের মধ্যেই চোখে পড়ে। অথচ এই আসক্তির ফলে যেমন ঘটছে স্বাস্থ্যহানি, তেমনই মানসিক দিক থেকে তৈরি হচ্ছে একাধিক জটিলতা।

এনিমে,মুভি,টিভি সিরিজের আসক্তিঃ

টিভি সিরিজ আসক্তি বা ব্যাধিকে মেডিক্যালে বিঞ্জ ওয়াচিং দ্বারা প্রকাশ করা হয়। Binge-watching সম্পর্কে এই পোস্টে বেশি কিছু বলব না, এতে পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাবে। তবে এককথায় বিঞ্জ ওয়াচিং হলো একজায়গায় বসে,শুয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে বিনোদন মূলক প্রোগ্রাম উপভোগ করা। 

Binge-watching সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেঃ 
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Binge-watching

ওয়েব সিরিজের ক্ষতিকর দিকঃ

১. ওয়েব সিরিজ দেখার নেশায় কমেছে ঘুমের সময়ঃ
ওয়েব সিরিজে আসক্ত হওয়ার কারণে রাত জেগে সিরিজ দেখে সম্পূর্ণ করার প্রবনতা তৈরি হয়। ফলে অনিয়ন্ত্রিত ঘুমের কারণে Insomnia সহ আরো নানান সমস্যা দেখা দেয়।

২. অস্বাভাবিক জীবন যাপনঃ
এই বিনোদন অতিরিক্ত উপভোগের কারণে & অতিমাত্রায় ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আমাদের দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে & আমরা আরো বেশি অলস হয়ে যাচ্ছি। ফলে আমাদের জীবন যাপনে বিরাট নেগেটিভ পরিবর্তন দেখা দেয়।

৩. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ 
অতিরিক্ত সিরিজ আসক্তির কারণে অনেকের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সবার থেকে দূরে থাকতে চায় & এটা একটা রুমে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।

৪. শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ 
রাত জাগার কারণে চোখে অস্বস্তি, কাজের প্রতি অনীহা, ওজন বেড়ে যাওয়া & এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে, শুয়ে থাকার কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। 

৪. সময়ের বরকত চলে যায়ঃ
লাগাতার একটার পর একটা পর্ব দেখতে দেখতে সারা রাত কোথা দিয়ে কেটে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। সময়ের বরকত লাভের উপায় সম্পর্কে জানতেঃ
http://bit.ly/somoye-borkot

৫. জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে ভুলিয়ে রাখাঃ
অতিরিক্ত সিরিজ আসক্তির কারণে আমাদের এই পৃথিবীতে আগমনের মূল উদ্দেশ্যকেই ভুলিয়ে রাখে। মুভি & টিভি সিরিজের প্রতি অতিরিক্ত সময় দেয়ার কারণে আল্লাহর হুকুম নামাজ সহ অন্যান্য বিধান প্রতি অবহেলা করা হয়।

৬. মুভি & টিভি সিরিজের চরিত্রগুলির প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসাঃ 
এতে অনেক সময় কাফের/অমুসলিমদের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। ফলে অনেকেই রিয়েল লাইফে সেই মুভি & টিভি সিরিজের চরিত্রগুলিকে অনুসরণ করা শুরু করে। আর
রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে’ ।
(আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)

৭. খারাপ বিষয়ের শিক্ষা নেয়াঃ 
সিরিয়াল থেকে বউ ও শাশুড়ির ঝগরা, সিরিয়াল কিলিং মুভি দেখে সিরিয়াল কিলার, ব্যাংক ডাকাতি মুভি-সিরিজ থেকে ডাকাতি ইত্যাদি। 

৮. LGBTQ & ফ্রি মিক্সিং কে প্রমোট করা হয়ঃ
একটা সময় LGBTQ & ফ্রি মিক্সিং এর বিষয় গুলো নরমালাইজ ছিল না। কিন্তু টিভি সিরিজ গুলোতে এইগুলোকে সাধারণ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় জোর করেই এগুলো দেখানো হয়। ফলে এগুলো এখন আমাদের কাছে খুব নর্মাল মনে হয়।

৮. প্রচুর অশ্লীলতা থাকেঃ
বর্তমান মুভি & টিভি সিরিজ অপ্রয়োজনে বিভিন্ন অশ্লীল দৃশ্য দেখানো হয়। যা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা তো দূরে থাক, একাও দেখা সম্ভব না। আর এই অশ্লীল দৃশ্যগুলো আমাদের পর্নোগ্রাফি ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। ফলে আমরা হারিয়ে যাই পর্নোগ্রাফির নীল দুনিয়ায়।

১০. আমরা জানতে চাই কিভাবে এটি শেষ হয়ঃ 
এতে অনেক গুলো সিজন থাকে & এতে বছর বছর নতুন নতুন সিজন এড হয়। যার শেষ দেখতে গিয়ে আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে game of thrones এর উদাহরণ দেয়া যাক। এই টিভি সিরিজের ইতোমধ্যে ৮টা সিজন, ৭৩টা এপিসোড রিলিজ হয়েছে। যার টোটাল রান টাইম ৭০ ঘন্টা ১৪ মিনিট। শুধু ১টা সিরিজের পেছনেই কতো সময় নষ্ট হয় চিন্তা করুন।

১১. সম্পূর্ণ সিরিজ একসাথে দেখার প্রবনতাঃ 
একসাথে সম্পূর্ণ সিরিজ দেখার প্রবনতার জন্য অনেক সময় এমন হয় যে, অনেকে এক বসায় 10-20 ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। এতে ঘুম & স্বাভাবিক জীবনের কর্মকান্ডে ব্যাঘাত ঘটে। 

নেটফ্লিক্সের একটি জরিপে দেখা গেছে যে 61% ব্যবহারকারী নিয়মিতভাবে একটি শোয়ের 2 থেকে 6টি পর্ব দেখেন, যখন অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে। Netflix ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই আনন্দদায়ক বিষয়ক সিরিজ গুলো দেখার পরিবর্তে,‌ উদাসীন/বেদনা দায়ক বিষয়ক সিরিজের পর্বগুলি দেখতে পছন্দ করে। ফলে এর প্রভাব তাদের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। গড়ে, লোকেরা একটি শোয়ের একটি সিজন দেখা শেষ করে।

তথ্য অনুযায়ী, স্ট্রেঞ্জার থিংস সিজন 2-এর প্রথম দিনেই 361,000 মানুষ সবকটি নয়টি পর্ব দেখেছে। 
(আমি যখন দেখি তখন ১&২য় সিজন ২টাই টানা দেখে ফেলেছিলাম)😑

এই সমীক্ষা থেকে নিশ্চই এর ভয়াবহতা‌ সম্পর্কে ধারণা করতে পারছেন।

১২. টানা টিভি সিরিজ দেখার নেতিবাচক প্রভাবঃ 
যদি আপনি কেবলমাত্র তিনটি পর্ব দেখতে চান তবে আপনি আপনার অজান্তেই এক সময়ে ছয়টি বা তার বেশি পর্ব দেখে ফেলবেন। সময়ের সাথে সাথে, এটি আপনাকে অলস করে তুলতে পারে।

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের জার্নাল প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টিভি সিরিজ দেখে, তাদের অকাল মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, খুব দীর্ঘ বসে বসে ডায়াবেটিস, রোগ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত হতে পারে।

এছাড়া আরো অনেক ক্ষতি রয়েছে যা একজন মুভি, সিরিজ আসক্ত ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারে।

এনিমে,মুভি,টিভি সিরিজের আসক্তি কমিয়ে আনার কিছু টিপসঃ

১. দৈনিক নির্দিষ্ট সময় & পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানঃ
চিকিৎসকরা বলছেন টেলিভিশনে বা কম্পিউটারে একটার পর একটা পর্ব দেখতে দেখতে ঘুম কম হলে শরীরে যে ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি হয়, তার ফলে সারা এরক্ষণই জমে থাকবে চরম ক্লান্তি। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমোলে যে কোনও আসক্তির মাত্রাই হবে কম।

২. সময় নির্দিষ্ট করে নিনঃ
সারা দিনে এই টেলিভিশন & টিভি সিরিজের পেছনে কতটা সময় দেবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। সে ক্ষেত্রে কাজে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কিছুটা কমে। আর কিছুদিন পরপর এই সময়ের পরিমান কমিয়ে আনুন। নিয়ম মেনে এই রুটিন অনুসরণ করলে আসক্তি ক্রমশ উধাও হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

৩. ভার্চুয়াল জগৎকে নয় ফিজিকাল জগৎকে উপভোগ করুনঃ
ঘুরে আসুন ইন্টারনেট বিহীন কোনও অঞ্চলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে নিজের জন্য রাখুন কিছু অবসর সময়। ধারাবাহিক বা ওয়েব সিরিজের পর্ব পরপর দেখতে থাকার অভ্যাসে বদল ঘটলে এই আসক্তির আধিক্য কমবে অনেকটাই।

৪. নিয়মিত শরীর চর্চা/ব্যায়াম করুন & পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুনঃ
শরীরচর্চা এবং সুষম খাদ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন এই সময়ে। নিয়মিত শারীরিক কসরত আর খাবারে তেল-মশলা কমালে শরীর থাকবে তরতাজা। বিচারবুদ্ধির স্বচ্ছতা কোনও আসক্তিকে আর কাছেই ঘেঁষতে দেবে না।

৫. টিভি সিরিজ দেখার সময় গুলো ভালো অভ্যাস দ্বারা‌ রিপ্লেস করুনঃ
যেমনঃ বই পড়া, ইসলামিক লেকচার সিরিজ শোনা, ভালো ভালো শিক্ষা মূলক ডকুমেন্টারি সিরিজ দেখা।

বাচ্চাদের কার্টুন দেখার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ

শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নয়, টিভি দেখার অভ্যাস শিশুদের জন্যও ভালো নয়। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায়, কিন্ডারগার্টেন যে শিশুরা প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘন্টা টিভি দেখার জন্য অভ্যস্ত থাকে, তাদের ওজন বেশি হওয়ার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ঝুঁকি থাকে। এছাড়া টিভি সিরিজ বা কার্টুন সিরিজ আমাদের সন্তানের চোখের অনেক ক্ষতি করে।

এজন্য বাচ্চাদের চেষ্টা করবেন কার্টুনের প্রতি আসক্তি তৈরি না করে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে। আর ছোট বাচ্চা হলো মাটির পুতুলের মত, তাদের ছোট বেলা থেকে যেভাবে গড়ে তুলবেন সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

যদি ঠিক করতে না পারেন আপনার সন্তানের জন্য কোন বই সিলেক্ট করবেন তাহলে নিচের পোস্টটি দেখতে পারেন।

ছোটদের জন্য ইসলামিক বইঃ
http://bit.ly/sotoder_islamic_book

আর যদি ছোট বাচ্চাদের কার্টুন দেখা একেবারেই বন্ধ করতে না পারেন। তাহলে তাদের এমন কার্টুন দেখতে দিন যা তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে নিজের পোস্টটি দেখতে পারেন।

মুসলিম শিশুদের জন্য কিছু ইউটিউব চ্যানেলঃ
http://bit.ly/youtube_channel_for_muslim_kids

এনিমে,মুভি,টিভি সিরিজের আসক্তির সমাধানঃ

এই আসক্তির ২টি সমাধান আমি দিব।

১. উত্তম সমাধানঃ 

এটা তাদের জন্য যাদের নেশা এখনও এতোটা সিরিয়াস হয় নাই তাদের জন্য। আমাদের সরাসরি এইসব দেখা বন্ধ করে দিতে হবে। এগুলোর পরিবর্তে ইসলামিক লেকচার সিরিজ & বাছাইকৃত ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও দেখতে হবে। 

বাছাইকৃত ইসলামিক ইউটিউব চ্যানেলের লিংকঃ
https://m.facebook.com/groups/963422407394224/permalink/1056798394723291/?mibextid=Nif5oz

প্রোডাক্টিভ & স্কিল ডেবলপমেন্ট কোর্সঃ
গুগলে সার্চ করলে অনেক কোর্স পেয়ে যাবেন।

ইসলামিক অনলাইন কোর্সঃ
https://m.facebook.com/groups/963422407394224/permalink/981806375555827/?mibextid=Nif5oz

ইসলামিক লেকচার সিরিজের কালেকশনঃ
https://m.facebook.com/groups/963422407394224/permalink/1258588077877654/?mibextid=Nif5oz

ইসলামিক অডিওবুক কালেকশনঃ
https://m.facebook.com/groups/963422407394224/permalink/1329521140784347/?mibextid=Nif5oz

বাছাইকৃত মুভি,ডকুমেন্টারি ও টিভি সিরিজঃ
এই বিষয়টা নিয়ে আমার কাজ করার ইচ্ছা ছিল। যেখানে আমরা আমাদের বাছাইকৃত মুভি,ডকুমেন্টারি & টিভি সিরিজ গুলো রিভিও এবং ডাউনলোড লিংক সহ শেয়ার করব। এজন্য একটা ফেসবুক গ্রুপও খুলেছিলাম। কিন্তু এতগুলো গ্রুপ কন্ট্রোল আমার একার পক্ষে সম্ভব না। তবে কেউ যদি আমাকে সাহায্য করতে আগ্রহী হোন তাহলে নিচের গ্রুপে জয়েন হয়ে আমাকে ইনবক্স করলেই হবে।

গ্রুপ লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/1163392250939668/?ref=share_group_link


২. অনুত্তম সমাধানঃ

এটা তাদের জন্য যাদের নেশা অনেক সিরিয়াস অবস্থায় পৌছে গেছে তাদের জন্য। তবে এক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে এটা কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। এজন্যেই একে অনুত্তম সমাধান নাম দিয়েছি। এটা আপনার এই অতিরিক্ত আসক্তিকে কন্ট্রোলের জন্য। আর অবশ্যই এখানে শেয়ার করা বিনোদন গুলো যারা উত্তম সমাধান ফলো করছেন তারা ভুলেও ক্লিক করবেন না। কারণ এখানে শেয়ার করা বিনোদন গুলো সুস্থ বিনোদন হলেও এখানে অনেক হারাম বিষয় রয়েছে। আর আলেমরা এ গুলো থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দেন। এক্ষেত্রে দায়িত্বের সাথে & নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাছাইকৃত সুস্থ বিনোদন দেখতে হবে। যেমনঃ দিনে ১ ঘন্টা বা প্রতি শুক্রবার ৩ ঘন্টা। এভাবে আস্তে আস্তে সময় কমিয়ে আনতে হবে। এবং এভাবে নিজদেরকে উত্তম সমাধানের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে।

বাছাইকৃত সুস্থ বিনোদনঃ
https://towfiqulwritting.notion.site/f1d0c56806934abe9818fb245979a0b3

মুভি & টিভি সিরিজ explanation: 
এজন্য ইউটিউবে অনেক চ্যানেল পেয়ে যাবেন।
যেমনঃ
বাংলার জন্যঃ cineseries central, rupali pordar golpo
ইংরেজির জন্যঃ movie recaps, mystery recapped 

প্রো টিপসঃ

কিছুদিন আগে আমিও এই আসক্তিতে আক্রান্ত ছিলাম । এমন কোনো এনিমে, সিরিজ, ইংরেজি, হিন্দি, তামিল মুভি, সিরিজ, বাংলা নাটক কোনো কিছুই বাকি রাখি নি। করোনার অবসরের সময় এই আসক্তি তৈরি হয়েছিল আমার। 

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। কারণ আমি এখন লেখালেখি & বই পড়ার পিছনে সময় দেয়ার কারণে ঐগুলো দেখার সময়ই পাই না। আর একজন প্রোডাক্টিভ পারসন হিসেবে ঐগুলো আমার কাছে অনেক আনপ্রোডাক্টিভ কাজ মনে হয়। 

তাই আপনারাও চেষ্টা করবেন নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখতে। হতে পারে সেটাতে আপনি অত দক্ষ নন। কিন্তু চেষ্টা করতে সমস্যা কোথায়! যেমনঃ আপনি লেখতে পছন্দ করলে লিখতে থাকবেন। যা ইচ্ছা হয় লিখে ফেসবুকে & ব্লগে পোস্ট করে দিবেন। কে কি বলল সেটা পরে দেখা যাবে। আস্তে আস্তে দেখবেন আপনি লেখালেখিতে দক্ষ হয়ে যাবেন।

এছাড়া যদি আপনি ভিডিও ব্লগ তৈরির ইচ্ছা থাকে। তাহলে চেষ্টা করবেন কোনো যায়গায় গেলে ব্লগ তৈরি করতে। যদিও আপনারটা অতো সুন্দর হবে না। যদিও এই ভিডিও দিয়ে আপনি ফেমাস ইউটিউবার হয়ে যাবেন না কিন্তু এই ভিডিওটা আপনার স্মৃতি হয়ে থাকবে। 

এছাড়া ফটো & ভিডিও ইডিটিং কোর্স করে রাখতে পারেন যেগুলো আপনার ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এককথায় নফসকে আপনাকে কন্ট্রোল করতে দিবেন না। নফসকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখবেন। নিফসকে অবসর দিয়ে দিলে সে এমন অপ্রয়োজনীয় কাজেই নিজের অধিকাংশ সময় নষ্ট করবে।

আর বাছাইকৃত ডকুমেন্টারি সিরিজ গুলো দেখার সময় অবশ্যই নোট নিবেন। আর কোনো বই পড়া শেষ হলে সেই বই সম্পর্কে রিভিউ দিবেন। যদিও আপনার বই রিভিউ প্রথম দিকে পারফেক্ট হবে না! কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আপনি আপনার লেখার উন্নতি লক্ষ্য করবেন।

আর বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করুন। অনেকে অবাক হয়ে যেতে পারেন। এখানে আবার মৃত্যুর কথা আসল কোথা থেকে! আসলে মৃত্যু আপনাকে এই পৃথিবীতে আসার কারণ মনে করিয়ে দেয় , আপনার জীবনের মূল্য & পৃথিবীতে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো কে মনে করিয়ে দেয়, আপনাকে আপনার সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন করে & আরো বেশি প্রোডাক্টিভ করে। এতে করে আপনি এই অপ্রয়োজনীয় সিরিজ & মুভি দেখে সময় নষ্ট না করে নিজের জন্য ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করবেন। 

বেশি কিছুর দরকার নেই। জীবনে ‘প্রত্যাশা’র পরিমাণটা কমিয়ে দিন। অল্পে তুষ্ট থাকুন। মনটা ফুরফুরে থাকবে। এইসব আসক্তি থেকে অনেকাংশে বেঁচে যাবেন, ইনশাআল্লাহ্।

একবার শুধু মন দিয়ে ভাবুন—আমাদের বেঁচে থাকার কী গ্যারান্টি আছে? হঠাৎ করেই তো জীবনের রঙ বদলে যায়; গন্তব্য ভিন্ন হয়ে যায়। কেন তাহলে আমরা জীবন নিয়ে এত এত স্বপ্ন দেখি? অথচ মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যু আমাদের সকল স্বপ্নকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি কথা মনকে রিফ্রেশ করে। তিনি বলেছেন, এমন কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই, যা মৃত্যুর স্মরণ দ্বারা দূর করা যায় না।

অর্থাৎ, আপনি যত দুঃখ-কষ্ট বা বিপদ-আপদেই থাকুন না কেনো, যখন মনের গভীর থেকে উপলব্ধির সাথে মৃত্যুর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন আর কোনো দুঃখ-কষ্টেই আপনি ভেঙে পড়বেন না। কারণ, মৃত্যুর চেয়ে বড় বিপদ আর নেই। অথচ, সেটি যেকোনো মুহূর্তেই আসতে পারে।

আমি আপনাদের বলছি না, মৃত্যুর ভয়ে জীবনটাকে শুকনো করে ফেলুন। তবে, জীবনের দুঃখ-কষ্টের অনুভূতিকে হালকা করতে এবং আখিরাতমুখী জীবনের মোটিভেশন পেতে মৃত্যুকে স্মরণ করতেই হবে। মৃত্যুর স্মরণের মাধ্যমে আমরা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবো এবং আল্লাহর সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হতে পারবো। ইনশাআল্লাহ্।  

মুভি & টিভি সিরিজের ভালো দিকঃ 

একটা জিনিসের যে সব খারাপ হবে ব্যাপারটা এমন না। এর কিছু ভালো দিকও আছে। যেমনঃ আমার ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে & বিভিন্ন দেশের কালচার সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে মুভি & টিভি সিরিজ সাহায্য করেছে। তবে অল্প কিছু ভালোর জন্য আমি আমার বড় ক্ষতি করে রাজি না।

যেমন আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ মদে ভালো আছে তবে খারাপ বেশি তাই হারাম। ঠিক এখানেও সেইম। তবে যারা ইংরেজি শিখতে চাচ্ছেন তারা সাবটাইটেল দিয়ে ডকুমেন্টারি সিরিজ দেখতে পারেন। এতে আপনার ইংরেজির দক্ষতা ও বাড়বে আবার বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও অর্জন হবে। এছাড়া কিছু ইউটিউব চ্যানেল ফলো করতে পারেন। 

(সময় পেলে আমার পছন্দের ইউটিউব চ্যানেল গুলো শেয়ার করব এখানে ইনশাআল্লাহ)

আল্লাহ আপনি আমার ভাইদের এই আসক্তি থেকে বের হয়ে প্রোডাক্টিভ কোনো কাজে লেগে থাকার তৌফিক দান করুন। 

আমিন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন