বর্তমানে যে বিষয়টা নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রথমেই একটু কথা বলে নেই। অনলাইনে দেখা যাচ্ছে অনেকেই Free fire & Pubg এর ব্যান হওয়ার কারণে খুশি হচ্ছে। যেমন খুশি হয়েছিল দেশে পর্ণ সাইট গুলো বন্ধ হওয়ার পর। কিন্তু ফলাফল কি হয়েছে আমরা জানি।
এছাড়া ভারতেও ব্যান করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল "vpn"। যদিও অনেকে বলতেছে vpn ব্যবহার করেও খেলতে পারবেনা এমন ব্যবস্থা করবে সরকার ! এটা হাস্যকর। যদি এটা সম্ভবই হয় তবে পর্ণ সাইট গুলোর ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না?
আর যদি ধরেও নেই ভিপিএন ব্যবহার করে এই গেমস গুলো বন্ধ করলো। কিন্তু এগুলো ছাড়া আর কোনো গেমস নেই। এগুলো বন্ধ হলে আসক্তরা COD, COC এর মত গেমস গুলো খেলা শুরু করবে। আর পিসি গেমারদে কথাতো বাদই দিলাম। তাই এটা কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এই কারণে আমাদের অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে।
যেমন, আমাদের এই আন্দোলনটাকে প্রকৃত অর্থে সফল করতে পারব তখন। যখন আমরা দেশের প্রত্যেকটা গেমে আসক্ত ভাই & বোনকে গেমস এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো বুঝাতে সক্ষম হবো। যখন তারা নিজে থেকেই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে অনুধাবন করতে পারবে। তখন নিজ থেকেই এ গুলো খেলা বন্ধ করে দিবে।
তো এখন প্রশ্ন হল, এটা কিভাবে সম্ভব হবে? আমি চেষ্টা করব এই পোস্টে এই সমস্যার সমাধান & কার কি দায়িত্ব ও কর্তব্য তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার।
এজন্যে পোস্টটাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করব।
১. গেমস আসক্তি সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে?
২. আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে আসক্ত ব্যক্তির পদক্ষেপ সমূহ।
৩. আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বাবা-মা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পদক্ষেপ সমূহ।
৪. অসক্ত ব্যক্তিকে না জানিয়ে কিভাবে তার ফোন & গেমস এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
১. গেমস আসক্তি সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
WHO (World Health Organization) ও (APA) American Psychiatric Association এর মতে ভিডিও গেইমে আসক্তি একটি মানসিক রোগ। এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমনঃ Gaming disorder, internet gaming disorder, problematic online gaming.
এর লক্ষণ গুলো হলঃ
Problem gambling (জুয়া বা এর পেছনে অর্থ ব্যয়), হতাশা, social withdrawal (একাকীত্ব পছন্দ করা/মানুষের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া) , দীর্ঘ সময় ধরে গেমস খেলা।
এর ফলে যে সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারেঃ
মেজাজ খিটখিটে, হতাশা, ঘুমে সমস্যা, মোটা হয়ে যাওয়া, Anxiety disorder (ভয় পাওয়া) ইত্যাদি।
বিস্তারিত জানতেঃ
⬇️ https://en.m.wikipedia.org/wiki/Video_game_addiction
২. আসক্ত ব্যক্তির পদক্ষেপ সমূহঃ
উপরে বর্ণিত গেমস সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞান অবস্থান জানার পর যদি আসক্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে। গেমস এর কারণে আসলেই তার স্বাস্থ্যের (বিশেষ করে চোখের) & পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে এবং সে নিজেও চায় গেমসের নেশা থেকে বের হতে। কিন্তু হতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে তার বাবা-মা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের বন্ধু রূপে পাশে থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে সম্ভব হলে এখনই ফোন থেকে সকল গেমস আনইনস্টল করে দিতে হবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট টার্গেট সেট করে ধীরে ধীরে এই আসক্তি বন্ধ করতে হবে।
যেমনঃ আজ ৩ ঘন্টা, কাল ২ ঘন্টা । এভাবে আস্তে আস্তে তা কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে যখন গেমস খেলার পেছনে সময় কম দিবে ফলে নেশা কমে যাবে। তখন ইনশাআল্লাহ গেমস এর নেশাও বন্ধ হয়ে যাবে।
এজন্যে নিজেকে অন্য কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে সময় দিতে হবে। যেমনঃ ভিডিও গেমস এর সময়টা খেলাধুলা, শরীর চর্চা সহ বই পড়ার মতো কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এখন যদি গেমসে আসক্ত ব্যক্তি বই পড়তে পছন্দ করেন তাহলে "ইলেকট্রনিক গেমস এবং কমার্সিয়াল সেন্টারের মহামারি" বইটি পড়তে দিতে পারেন। আর বইটি যেকোনো অনলাইন বুক স্টোরে পেয়ে যাবেন।
যদি কিনতে না পারেন তাহলে নিচের লিঙ্ক থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে নেবেন।
⬇️⬇️⬇️
https://i-onlinemedia.net/downloads/books/general/Electronic_games_and_commercial_centre.pdf
ইউটিউব থেকে এ বই এর অডিও বুকও শুনতে পারেন
⬇️⬇️⬇️
https://m.youtube.com/playlist?list=PL6AAfPzsBJ6v8F_npUlV9D6FWoW6qgXk7
৩. বাবা-মা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পদক্ষেপঃ
যে গেমসের নেশায় আসক্ত, বাবা-মা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রথমেই তাদের ভালো করে গেমস এর ক্ষতিকারক দিকগুলো জানাতে হবে। যেমনঃ এর কারণে তার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তার স্বাস্থ্য (চোখ) এর ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কোন লাভ হচ্ছে না। মূলত যেভাবে একজন আসক্ত ব্যক্তিকে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো অনুধাবন করানো যায় আরকি।
কারণ জোর জবরদস্তি করে হয়তো বা কিছুদিনের জন্য গেমস থেকে দূরে রাখা যাবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোন ফলাফল আসবে না। তাই সর্বপ্রথম গেমসের নেশায় আসক্ত ব্যক্তি কে বিষয়টা বুঝাতে হবে।
এখন উপরের পরামর্শে যদি কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে নিচের স্টেপগুলো ফলো করুনঃ
১. আসক্ত ব্যক্তকে ফোন না দেয়াঃ
এটা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন এর কারনে আবার কোনো পাগলামি না করে। এখানে অনেক বাবা-মা ভুল করে। তাই এদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যেন হিতে বিপরীত না হয়ে যায়।
সে ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে নেশা দূর করতে হবে। যেমনঃ আজ ২/৩ ঘন্টার জন্য মোবাইল দিব এর বেশি না। আস্তে আস্তে তা কমিয়ে আনতে হবে।
২. ফোন লক করে রাখাঃ
এতে বাবা-মা ই শুধু পাসওয়ার্ড জানবেন। ফলে যখন গেমস খেলার প্রয়োজন হবে বা বাবা-মা অনুমতি দিবে। তখন ওনাদে কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন আনলক করে নিবে।
৩. গেমস আনইনস্টল করে দেওয়াঃ
প্রয়োজনে গেমস আনইনস্টল করে দিবেন। কারন অনেক সময় দেখা যায় একসাথে অনেক গেমস ফোনে থাকার কারনে অযথাই খেলা হয়। একটা খেলে বোর হয়ে গেলে অন্যটা খেলে। এতে প্রচুর সময় অপচয় হয়। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে অতিরিক্ত গেমস গুলো আনইনস্টল করে দিতে হবে।
উপরের পদক্ষেপ গুলো হলো আসক্ত ব্যক্তির নিজস্ব ফোন না হলে সে ক্ষেত্রে।
৪. অসক্ত ব্যক্তিকে না জানিয়ে তার ফোন & গেমস এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণঃ
এখন, যদি আসক্ত ব্যক্তি নিজের ফোন ব্যবহার করে তাহলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে বিষয়টা একটু কঠিন। তবে অবশ্যই আগে গেমস এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বুঝাতে হবে। বুঝতে পারলে ভালো। আর বুঝতে না পারলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আমরা গুগল এর একটা এপস ব্যবহার করব "Google Family Link"। এর মাধ্যমে আপনি গেমস এ আসক্ত ব্যক্তির ফোন কন্ট্রোল করতে পারবেন।
যেমনঃ লোকেশন জানতে পারবেন, গুগল এক্টিভিটি দেখতে পারবেন, কখন কখন ফোন ব্যবহার করবে তার সিডিউল করে দিতে পারবেন, আপনার ফোন থেকে ঐ ফোন লক করতে পারবেন & এমনকি যেকোনো এপস এর ব্যবহার চাইলে বন্ধ করে দিতে পারবেন।
এপটা গেমসে আসক্ত ব্যক্তির ফোনের সাথে লিংক করতে হলে অবশ্যই ওর ফোনটা কিছু সময়ের জন্য আপনার কাছে আনতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে লিংক করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে কোনো কিছুই করার নেই।
এখন কিভাবে কি করতে হবে তা নিয়ে ইউটিউবে একটা ভিডিও পেয়েছি।
ভিডিও লিংকঃ
⬇️⬇️⬇️
https://youtu.be/FX8Chp6jHHM
শেষ কথা হল, কোনো প্রকৃত মুসলিম কখনোই নিজের জীবনের মূল্যবান সময়। এইসব মূল্যহীন গেমস খেলে নষ্ট করতে পারে না। আল্লাহ তুমি আমাদের সাহায্য করো এবং ভিডিও গেমস এ আসক্ত ভাইদের জন্য কাজটা সহজ করে দাও।
আশা করি এটার মাধ্যমে সবাই সবকিছু বুঝে যাবেন। তারপরও কারো কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে আমাকে জানাতে পারেন । আমি সাহায্য করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
এরকম আরো ইসলামিক রিসোর্স পেতে জয়েন হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
⬇️⬇️⬇️
www.facebook.com/groups/963422407394224
পোস্টটি কপি/শেয়ার করে সাদাকায়ে জারিয়া চালু রাখুন। জাযাকাল্লাহু খইরন।
পোস্টটি কপি/শেয়ার করে দাওয়াতি কাজে শরীক হতে পারেন। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“প্রচার করো যদি একটি আয়াতও হয়”
(সহিহ বুখারি)।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন